WB Smart Meter Update – রাজ্যে স্মার্ট মিটার নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ শুরু হয়েছে আর রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তর সেই বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। কিছুদিন আগেই একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল সরকার যেখানে লেখা ছিল আপাতত সাধারণ মানুষের বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানোর কাজটি বন্ধ করা হবে। এরজন্য রাজ্যের অনেক মানুষ স্বস্তি পেলেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
কেন দেওয়া হল এই স্থগিতাদেশ ?
অনেকদিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় স্মার্ট মিটার নিয়ে অভিযোগ উঠছিল। অনেকেই দাবি করেছেন যে নতুন মিটার লাগানোর পর থেকেই বিদ্যুতের বিল বেড়ে গিয়েছে। কখনো সেটি দ্বিগুণ হচ্ছে তো কখনও তিনগুণ হচ্ছে। এরজন্য অনেকে বিক্ষোভও করেছিলেন। সাধারণ মানুষের এই সমস্যার কথা মনে করেই রাজ্য সরকার এই স্থগিতাদেশ দিয়েছে। জানা গিয়েছে এখন শুধু সরকারি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে স্মার্ট মিটার বসানো হবে।
কী এই স্মার্ট মিটার?
স্মার্ট মিটার হল একটি অত্যাধুনিক ডিজিটাল মিটার, এটি অন্যান্য প্রথাগত অ্যানালগ মিটার থেকে অনেকটাই আলাদা। এটি রিয়েল টাইম বিদুৎ ব্যবহারের সঠিক হিসেবে রাখতে সক্ষম ও সেই হিসেবটি সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়েও দিতে পারে। এরজন্য আর মিটার রিডিং করতে হয়না আলাদা করে। শুধু তাই নয় এটির বিলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। এতে আপনারা নিজেদের বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ে অনেকটাই সচেতন হতে পারবেন।
এতো কিছুর পরও কেন এর বিরোধিতা হচ্ছে ?
স্মার্ট মিটারের অনেক সুবিধা রয়েছে তবুও রাজ্যের গ্রাহকরা এই মিটারটি ব্যবহার করে খুব একটা খুশি হয়নি। শুধু বেশি বিল নয় আরো অনেক কিছুই গ্রাহকদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে:-
• যেহেতু এই স্মার্ট মিটারটি প্রিপেডে চলে তাই আপনাকে এটি ব্যবহার করার আগে রিচার্জ করে নিতে হবে। এবার অনেকেই ভাবছেন যে এই ক্ষেত্রে যদি টাকা শেষ হয়ে যায় তাহলে বিদ্যুত সংযোগও বন্ধ হয়ে যাবে এতে বিপদে পড়ে যেতে পারেন তারা। অন্যদিকে বিদ্যুত দপ্তরও জানিয়েছেন ব্যালেন্স শূন্য হলেও লাইন কাটা হবেনা। এতে ৩০০ টাকার মতো নেগেটিভ ব্যালেন্স থাকবে তাই চিন্তার কোনো কাজ নেই।
• এই স্মার্ট মিটারগুলোর দাম বাকি প্রচলিত মিটারগুলোর থেকে অনেক বেশি। এই মিটারগুলোর দাম ৭০০০-৮০০০ টাকা পর্যন্ত। যদিও এটির খরচ প্রত্যক্ষভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছেনা কিন্তু অনেকে মনে করছেন পরে হয়তো এটির খরচ সরাসরি গ্রাহকদের কাছ থেকেই নেওয়া হবে।
• এতে রয়েছে টাইম অফ ডে ট্যারিফ (ToD) অর্থাৎ এটির মাধ্যমে দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাম দেখানো হবে। যেমন, পিক আওয়ারে (সন্ধ্যা বা রাতে) বিদ্যুতের দাম অনেকটাই বেশি হবে এবং দিনের বেলায় (সৌর ঘণ্টা) বিদ্যুতের দাম কম হবে, অর্থাৎ রাতে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে বিল বাড়ার আশঙ্কা থাকবে।
এখন এই স্মার্ট মিটার বসানো নিয়ে স্থগিতাদেশ দেওয়া হলেও বিদ্যুত আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ বন্ধ হবে কিনা সেটি জানা যায়নি। স্মার্ট মিটার ভবিষ্যত বিদুৎ ব্যবস্থার একটি প্রয়োজনীয় অংশ কারণ এটি ঠিকমতো ব্যবহার করা হলে বিদুৎ চুরি বন্ধ করা যাবে ও সিস্টেমের লস কমানো যাবে।
এখন সরকার ও বিদুৎ দপ্তরের কাজ হল সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা। বিল বেশি কেন হচ্ছিল সেটির দিকেও নজর রাখতে হবে ও মানুষকে এই স্মার্ট মিটারের সুবিধাগুলোর বিষয়ে বোঝাতে হবে ও (WB Smart Meter Update) তাদেরকে এই বিষয়ে আরো সচেতন করতে হবে। এই স্থগিতাদেশের সময় যদি স্মার্ট মিটারকে স্বচ্ছ ও গ্রাহক-বান্ধব করে তোলা যায় তাহলে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা সকলেই গ্রহণ করতে পারবেন।